নীল পাহার || Obayed hoque
বই পরিচিতি
বইঃ নীল পাহাড়
লেখকঃ ওবায়েদ হক
বর্তমান প্রচ্ছদঃ রাজিবুর রহমান রোমেল
মূল্যঃ ১৫০ টাকা
পৃষ্ঠাঃ ১১২
প্রকাশনীঃ বিদ্যানন্দ
প্রকাশকালঃ প্রথম প্রকাশ বইমেলা-১৫
নীল পাহাড় কাহিনি সংক্ষেপঃ
আশির দশকের কাহিনি। কাহিনিটা মানিক মিত্র নামের একজন ডাক্তারকে নিয়ে। যার কেউ নেই এই পৃথিবীতে। কারণ সে অনাথ। খোলাখুলিভাবে বললে জারজ। এই মানিক মিত্রকেই নিয়ে এগিয়ে গেছে উপন্যাসিকার কাহিনি।
তার নির্ঝঞ্ঝাট জীবনে পরিবর্তন আসে যখন ডাক্তার সোবহান তাকে বদলি করে দেয় বান্দরবানে। এখান থেকেই গল্পের শুরু।
সিনিয়র ডাক্তার সোবহান সাহেবের সাথে ধন্ধের ফসল হিসেবে তাকে বদলি করে দেওয়া হয় বান্দরবনের বলিপাড়ায়। যেখানে বদলি মানেই বলি ছড়ানো।
সেখানে তার সাথে এবং তার আশেপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়েই এগিয়েছে বইয়ের কাহিনি।
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ- পাহাড় আমার খুব প্রিয়। সাথে পাহাড়ি মানুষগুলো। কিন্তু পাহাড়কে ভালোভাবে দেখা হয়নি। মানে গভীর ভাবে। দেখা হয়নি , চেনা হয়নি বলেই হয়তো পাহাড় আমাকে অমোঘভাবে টানে।
.
নিজের চোখে দেখা ওই পাহাড়ের গল্পটা তাই খুব করে মন ছুঁয়ে গেছে। জলেশ্বরীর মাধ্যমে ওবায়েদ হকের শক্তিশালী লেখনির সাথে পরিচিত হলেও এটাই ওনার সবচেয়ে সেরা বই। অনাথ ডাক্তার মানিকের সাথে আমিও যেন আরেকবার দৌড়ে এসেছি পাহাড়ের কোলে। আসলে বইয়ে পাহাড়ের যেসব বর্ণনা ওবায়েদ হক দিয়েছেন, তার অনেকটাই নিজের চোখে দেখা বলে বইটা পড়ার পুরোটা সময় যেন আমি সত্যি সত্যিই মানিক মিত্রের সাথে ছিলাম। তাছাড়া প্রাণবন্ত বর্ণনায় তা সত্যিই বাস্তব হয়ে ধরা দিয়েছে আমার কাছে। খুব ভাল লেগেছে। জীবনধর্মী রচনাতেও যে টুইস্ট দেওয়া যায়, এটা ওবায়েদ হকের লেখা না পড়লে বোঝা যাবে না। শেষটা খুব বেশি চমকপ্রদ। পাহাড়টা কেন নীল, সে রহস্য উদঘাটন করে চমকে উঠতে বাধ্য।
.
এই বইয়ের কিছু কিছু লাইন আমাকে প্রচন্ডভাবে নাড়া দিয়েছিল। বই পড়ে ক্রমাগত কান্নাকাটির অভ্যাসটা ছোটবেলাতেই ফেলে এসেছিলাম। কিন্তু,
"মা এসেছিল একদিন কালো শ্লেটে। 'ম'-এর সাথে 'আ'-কার দিয়ে মা হয়েছিল।"- মানিক মিত্র যখন এই কথাটা বলে তখন বহুকাল পর চোখটা ঝাপসা হয়ে পড়েছিল।
"খাওয়ার সময় আমার ডাল আমি তোকেই দিব, তুই তোর মা দিস।"
"আমার কালি সব মায়ের নামেই ঢেলে দিতাম। ক্লাসে লেখার জন্য কালি থাকতো না। পণ্ডিত বাবু দাঁড় করিয়ে রাখতো। জানতাম না পেছনের বেঞ্চে এক জোড়া চোখ আমার জন্য জল ফেলত। ..."
এই লাইনগুলি পড়ার সময় আমি সত্যিই অঝোরে কেঁদেছি। বই পড়া বন্ধ করে কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থাকতে হয়েছে।"সারাজীবন বই পড়ে গেলেও একজীবনে একজন লোকের পক্ষে দশ হাজারের বেশি বই পড়া সম্ভব নয়। এটা হলো হুমায়ূন স্যারের কথা। তাই ঠিক করেছিলাম এখন আর কোন বই দ্বিতীয় বার পড়ে সময় নষ্ট করব না। খুব অল্প কিছু বই, যেগুলি আমি দ্বিতীয়বার পড়ব বলে ঠিক করেছি, এটাও তার মধ্যেই পড়বে। এই বইটা আমি যখন পড়েছিলাম, তখন এটা আউট অফ প্রিন্ট ছিল। এটার হার্ডকপি যোগাড় করেছিলাম নিভৃতচারী এই লেখকের কাছ থেকে। তাঁর অটোগ্রাফ সহ।
♦রিভিউটি লিখেছেনঃ- মাদিহা মৌ।
No comments