Header Ads

দক্ষিণের যাত্রী (A voyage around the world: South America)


লেখক: জুল ভার্ন
অনুবাদক: ডিউক জন
মূল্য: ১০৪৳
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৩০২
প্রকাশকাল: ২০১৫
প্রকাশক: সেবা প্রকাশনী
রিভিউ লেখক- সায়েম শামস

.
কাহিনি সূচনা: সদ্য বিবাহিত স্ত্রীকে নিয়ে সমুদ্র বিলাস করতে নিজের জাহাজ ডানক্যান নিয়ে বেরিয়েছেন লর্ড গ্লেনারভ্যান। পথিমধ্যে সমুদ্রে একটা হাঙর শিকার করে গ্লেনারভ্যানের লোকজন। সবাইকে অবাক করে দিয়ে একটা বোতল পাওয়া যায় সেই হাঙরের পেটের ভেতর। বোতলের ভেতরে রয়েছে ভিন্ন তিনটি ভাষায় লেখা তিনটি পার্চমেন্ট। তবে সবগুলোর বক্তব্য একই। পার্চমেন্টগুলোর বিভিন্ন অংশ নষ্ট হয়ে গেছে। তারপরও তিনটি পার্চমেন্ট আর কিছুটা অনুমান মিলিয়ে মোটামুটি যা বোঝা গেল- “ব্রিটানিয়া নামের একটা জাহাজ ডুবে গেছে সাগরে। জাহাজটি ছিল ক্যাপ্টেন গ্র্যান্টের। তিনি আর আর তার দু’জন ত্রুু কোনমতে নিজেদের প্রাণ বাঁচিয়ে কোনো একটা তীরে উঠেছিলেন। তারপর সম্ভবত বন্দি হয়েছেন স্থানীয় অসভ্য ইন্ডিয়ানদের হাতে। এক ফাঁকে সাহায্য চেয়ে পার্চমেন্ট লিখে বোতলে ভরে সেটা সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছেন। পার্চমেন্টে জায়গাটার অক্ষাংশও উল্লেখ আাছে।”
এই পার্চমেন্টের উপর ভিত্তি করে শুরু হয় ক্যাপ্টেন গ্রান্টকে উদ্ধারের অভিযান।
.
রিভিউ: জুল ভার্ন সাইন্স ফিকশন লেখার জন্য জনপ্রিয় হলেও তিনি মার্ডার মিস্ট্রি, অ্যাডভেঞ্চার, ড্রামা জনরার লেখাতেও দক্ষ ছিলেন। “দক্ষিণের যাত্রী” মূলত অ্যাডভেঞ্চার-ড্রামা জনরার বই।
বইটির প্রথম অংশ যথেষ্ট ইন্টারেস্টিং। বিশেষ করে জ্যাক পেগ্যানল নামের এক ভূগোলবিদের পরিচয় পর্বের ব্যাপারটা। পেগ্যানল এমন একটি চরিত্র যা আপনাকে একই সাথে হাসাবে আবার রাগিয়েও দেবে! বইটির প্রথম অংশ থেকে একদম শেষ পর্যন্ত এই ব্যক্তির জ্বালাতন আনন্দ দেবে সবাইকে।
প্রচুর বর্ণনা ও সংলাপ পড়তে হবে পাঠককে কিন্তু কাহিনি সে-হিসেবে এগোবে কম। সবচেয়ে হতাশার বিষয়, ৩০২ পৃষ্ঠা পড়েও ক্যাপ্টেন গ্রান্টের মুখ পাঠক দেখতে পাবে না। কারণ দক্ষিণের যাত্রী হচ্ছে এই উদ্ধার অভিযানের প্রথম খণ্ড মাত্র!
সেবা প্রকাশনী থেকে এরআগেও এভাবে দু’খণ্ডে জুল ভার্নের কাহিনি বেরিয়েছিল। “মরুশহর” ও “নাইজারের বাঁকে”। অবশ্য সংক্ষিপ্ত আকারে ছিল সেগুলো। যা-ই হোক, যেহেতু দক্ষিণের যাত্রীতে কাহিনি শেষ হয়নি তাই কাহিনির ব্যাপারে ভাল-মন্দ বেশি কিছু বলাও যাচ্ছে না। অপেক্ষা করতে হচ্ছে পরবর্তী খণ্ডের জন্য।
.
অনুবাদ: সেবা প্রকাশনীর অনুবাদ হলেও ব্যক্তিগতভাবে আমি সন্তুষ্ট হতে পারিনি। কারণ অনুবাদটা ঠিক সেবা সুলভ সুখপাঠ্য মনে হয়নি। যখনই সাবলীল লেখার রেশ ধরে পড়ার গতি বাড়তে গিয়েছে তখুনি অপ্রচলিত, শক্ত বাংলা শব্দ এসে থমকে দিয়েছে আমাকে। ক্লাসিক বইয়ের অনুবাদে ইংরেজি শব্দের অযাচিত উপস্থিতিও একটা বড় কারণ। তার সাথে আছে “ইয়াদ”, “কামাল” ইত্যাদি হিন্দি (সম্ভবত) শব্দের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার। এছাড়াও ভ্রু কুঁচকে গেছে খ্রিস্টান চরিত্র যারা কিনা সপ্তাহ অন্তর চার্চেও যায় তাদের মুখ থেকে “সুবাহানাল্লাহ”, “আলহামদুলিল্লাহ”, “ইনশা’আল্লাহ”র মতো ইসলামি সংলাপ বেরোতে দেখে! সম্পূর্ণ অযৌক্তিক লেগেছে বিষয়টা।
এসব বিষয় বাদ দিয়ে অনুবাদের অন্যান্য অংশ ভাল ছিল। বানান বিভ্রাটও চোখে পড়েনি।
.
কাহিনি সংক্ষেপ (ব্যাক কভার থেকে): বন্দিশিবির থেকে এল পয়গাম। কিন্তু যথাযথ কর্তৃপক্ষের আচরণ কংস মামার মতো। মানবিকতার চেয়ে বড় হয়ে উঠেছে রাজনীতির নোংরা খেলা। শেষ পর্যন্ত বাকি রইল একটা কাজই। বিপন্ন জাহাজীদের উদ্ধারে এগিয়ে চলল ওরা সাতজন।... মানুষগুলো কোথায়?
এদিকে রুমাল বদলে হয়ে যাচ্ছে বিড়াল। রাতারাতি। চির-তুষার মুছে গিয়ে উদ্ভাসিত বেহেশতের উদ্যান! কীভাবে সম্ভব?
কল্পকাহিনির পৃষ্ঠা ছেড়ে বাস্তবে হাজির হলো নাকি আকাশের রাজা? দেখে বজ্র ছুঁড়ে মারল অচেনা দোসর। প্রকৃতির হারামিপনা তো রয়েছেই, ষোলো কলা পূর্ণ করতে মুখ খিঁচাল রক্তলোভীর দল। প্রাণ বাঁচানোই এখন দায় এত কিছু সামলে পাবে কি অভিযাত্রীরা সেই মানুষটির হদিস- যার আছে দুই জিভ, দুই হৃৎপিণ্ড?
.
বি.দ্র. “এদিকে রুমাল বদলে হয়ে যাচ্ছে বিড়াল। রাতারাতি।” এই অংশটুকুর ব্যাখ্যা আমি বইয়ের ভেতরে খুঁজে পাইনি। আপনারা কেউ পেয়ে থাকলে জানাবেন।

No comments

Theme images by duncan1890. Powered by Blogger.